আয়কর আইনে কি ধরনের আয় হিসেবে আনতে হবে অর্থাৎ আয়ের খাতসমূহ : বেতন

আয়কর অধ্যাদেশের ধারা-২০ মোতাবেক আয়কর ধার্য্যরে জন্য এবং মোট আয় নির্ণয়ের জন্য সকল আয়কে নিম্নেবর্ণিত খাতে বিভক্ত করে হিসাবে করতে হবে, যথাঃ
 

(১) বেতন
২১(১) বেতনাদি (আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ২১ এবং আয়কর বিধিমালা ১৯৮৪ এর বিধি ৩৩ অনুযায়ী)
সাধারণতঃ মূল বেতন উৎসব ভাতা, মহার্ঘ ভাতা, পরিচারক ভাতা, সম্মানী ভাতা, ওভারটাইম ভাতা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত চাঁদা এবং বিভিন্ন পারকুইজিটস (সুবিধা) বেতন খাতের করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। বেতনাদি ঘরটি পূরণ করার আগেই রিটার্ন ফরমের (আইটি ১১গ) তৃতীয় পৃষ্ঠায় বর্ণিত তফসিল-১ (বেতনাদি) পূরন করিতে হইবে। প্রয়োজনে করদাতা পৃথক কাগজে বেতন খাতের আয়ের হিসাব সংযোজন করিতে পারিবেন। তফসিল-১ (বেতনাদি)  পূরণের পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো- (সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি ব্যতীত)অর্থ আইন ২০১৬ দ্বারা নতুন রিটার্ন ফরমের সাথে তফসিল ২৪এ প্রবর্তন করা হয়েছে।

আয়ের বিস্তারিত বিবরণী সম্বলিত তফসিল-১ (বেতনাদি)
(সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যতীত)

বেতন ও ভাতাদিআয়ের
পরিমাণ (টাকা)
কর মুক্ত আয়ের পরিমাণ
টাকা
নীট করযোগ্য আয়
(টাকা)
মূল বেতন করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ করযোগ্য।
মহার্ঘ ভাতা করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ করযোগ্য।
যাতায়াত ভাতা (নগদে গৃহীত) ৩০,০০০/- টাকা পর্যন্ত করমুক্ত৩০,০০০/- টাকা বাদ দিলে
যে অংশ অবশিষ্ট থাকে।
বাড়ী ভাড়া ভাতা (নগদে গৃহীত) ৩,০০,০০০/-টাকা বা মূল বেতনের
৫০% এর মধ্যে যেটি কম তা করমুক্ত।
অবশিষ্ট অংশ
চিকিৎসা ভাতা প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০% অথবা বার্ষিক
১,২০,০০০/- টাকা, এ দুটির মধ্যে যেটি কম
সে পরিমাণ অংক
– প্রাপ্ত ভাতার অবশিষ্ট অংশ
– প্রতিবন্ধী এমপ্লয়ির ক্ষেত্রে ১০
লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা কর মুক্ত আয় হিসেবে গণ্য হবে।
– কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডার পরিচালক ব্যতীত অন্য কোন এমপ্লয়ির ক্ষেত্রে হার্ট, কিডনি, চক্ষু, লিভার এবং ক্যান্সার সার্জাারীর জন্য প্রাপ্ত চিকিৎসা খরচ কর মুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
পরিচারক ভাতা করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ
ছুটি ভাতা করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ
সম্মানী/পুরস্কার/ফি করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ
ওভারটাইম ভাতা/মহার্ঘভাতা করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ
উৎসব ভাতা করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ
স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে
নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত চাঁদা
 করমুক্ত নয়সম্পূর্ণ অংশ
স্বীকৃত ভবিষ্যত তহবিলে অর্জিত সুদ মূল বেতনের ১/৩ অংশ পর্যন্ত প্রাপ্ত সুদ
(এখানে বেতন বলতে মূল বেতন এবং
মহার্ঘ ভাতা বুঝাবে) অথবা সরকার কর্তৃক
নির্ধারিত হার ১৪.৫০% এ দুয়ের মধ্যে
যেটি কম
এর অতিরিক্ত করযোগ্য।
যানবাহন সুবিধার জন্য বিবেচিত আয় যদি করদাতা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিয়োগকর্তার নিকট থেকে গাড়ী পান তাহলে মূল বেতনের ৫% সরাসরি নীট করয্যোগ্য আয় হবে। অথবা সর্বনিম্ন বার্ষিক ৬০,০০০/- টাকা, দুটির মধ্যে  যেটি বেশি বলে অনুমিত আয় হিসাবে গণ্য হবে। মূল বেতনের ৫%
বা ৬০,০০০/- যেটি বেশি।
বিনামূল্যে বা হ্রাসকৃত ভাড়ায় প্রাপ্ত বাসস্থানের জন্য বিবেচিত আয় ক। যদি করদাতা নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত বিনা ভাড়ায় সজ্জিত বা অ-সজ্জিত বাসস্থানে বাস করেন তাহলে সাধারণ ভাবে মূল বেতনের ২৫% করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হবে।খ। যদি করদাতা নিয়োগকর্তা থেকে হ্রাসকৃত ভাড়ায় সজ্জিত বা অ-সজ্জিত বাসস্থান প্রাপ্ত হন সেক্ষেত্রে সাধারণভাবে মূল বেতনের ২৫% হতে প্রকৃত পরিশোধিত ভাড়া বাদ দিয়ে পার্থক্য করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হবে।মূল বেতনের ২৫%
যোগ হবে।পার্থক্য করযোগ্য আয় হবে = *
বাদঃ প্রকৃত ভাড়া           =*
খ) মূল বেতনের ২৫%     = *
অন্যান্য, যদি থাকে (বিবরণ দিন) করদাতা যদি নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত বাসস্থানে দারোয়ান, মালি, বাবুর্চী কিংবা অন্য কোন সুবিধা পেয়ে থাকেন তবে প্রাপ্ত সুবিধার সমপরিমাণ আর্থিক মূল্য করযোগ্য আয় হিসাবে দেখাতে হবে। 
ছুটি নগদায়ন করমুক্ত নয়।করযোগ্য
পেনশন করমুক্ত।শূণ্য
গ্র্যাচুইটি ২.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত অংক করযোগ্য
Workers Participation Fund ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।৫০,০০০/- টাকার অবশিষ্ট অংশ

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন খাতে আয় নিরূপনঃ
সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির উপর আয় পরিগণনার জন্য একটি প্রজ্ঞাপন এস,আর,ও নং ১৯৮-আইন-আয়কর/২০১৫, তারিখ: ৩০ জুন, ২০১৫ জারি করা হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে  একজন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন (basic salary), উৎসবভাতা এবং বোনাস ব্যতীত সকল প্রকার ভাতা ও সুবিধাদিকে এতদ্বারা প্রদেয় আয়কর হইতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
২০১৬-১৭  কর বছরের  আয়কর রিটার্নে এক অর্থ বছরে প্রাপ্ত মূল বেতন বোনাস ও উৎসব ভাতা করযোগ্য আয় হিসেবে প্রদর্শন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রদেয় করের পরিমাণ পরিগণনা  করতে  হবে। সামরিক বাহিনীতে কর্মরতদের ক্ষেত্রেও এ বিধান সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
উদাহরণের সাহায্যে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর আয় এবং কর পরিগণনা নিম্নে দেখানো হলঃ
(ক)  জনাব লিয়াকত  বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা। ৩০ জুন, ২০১৬  তারিখে সমাপ্ত অর্থ বছরে তিনি নিম্নোক্ত হারে বেতন ভাতাদি পেয়েছেনঃ
    মাসিক মূল বেতন  ৩৩,২০০/-
    চিকিৎসা ভাতা        ১৫০০/-
    নববর্ষ ভাতা         ৬,৬৪০/-
তিনি সরকারি বাসায় থাকেন ভবিষ্য তহবিলে তিনি প্রতি মাসে ৫০০০/- টাকা জমা রাখেন। হিসাব রক্ষণ অফিস হতে প্রাপ্ত প্রত্যয়ন পত্র হাতে দেখা যায় যে, ৩০/০৬/২০১৬ তারিখে ভবিষ্য তহবিল অর্জিত সুদের পরিমাণ ছিল ৩০,৫০০/- টাকা। কল্যাণ তহবিলে ও  গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা প্রদান বাবদ প্রতিমাসে বেতন খাতে কর্তন ছিল যথাক্রমে ৫০/- ও ৪০/- টাকা। এছাড়াও তিনি একটি তফসিল ব্যাংকের ডিপোজিট পেনশন স্কীম মাসিক ৩,০০০/- টাকার কিস্তি জমা। ২০১৬-২০১৭ করবছরে জনাব লিয়াকত সাহেব এর মোট আয় এবং করদায় কত হবে তা নিম্নে  পরিগণনা করা হলোঃ
বেতন খাতে আয় ঃ
মূল বেতন (৩৩,২০০/- × ১২ মাস)                       =   ৩,৯৮,৪০০/-
বোনাস (৩৩,২০০×২)­                                      =      ৬৬,৪০০/-
চিকিৎসা ভাতা (১৫০০×১২)            =      ১৮,০০০/-                
(-) করমুক্ত                          ১৮,০০০/-                        –
নববর্ষ ভাতা   ৬,৬৪০/- সম্পূর্ণ কর মুক্ত                               –      
    মোট আয়                                                  =   ৪,৬৪,৮০০/-
কর দায় পরিগণনাঃ
প্রথম ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত  ‘শূন্য’ হার
অবশিষ্ট ২,১৪,৮০০ টাকা পর্যন্ত  ১০% হারে       ২১,৪৮০/-
    মোট কর দায় =                                  ২১,৪৮০/-
বিনিয়োগ জনিত আয়কর রেয়াত পরিগণনা
প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণঃ
১। ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা (৫,০০০×১২)                     = ৬০,০০০/-
২। কল্যাণ তহবিলে চাঁদা (৫,০×১২)                        =     ৬০০/-
৩। গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা (৪০×১২)                     =     ৪৮০/-
৪। ডিপোজিট পেনশন স্কীমে কিস্তি (৩,০০০×১২)          = ৩৬,০০০/-
     মোট প্রকৃত বিনিয়োগ                                    = ৯৭,০৮০/-    
রেয়াতের জন্য অনুমোদনযোগ্য অংক (eligible amount)ঃ

(ক) মোট প্রকৃত বিনিয়োগ               ৯৭,০৮০/-
(খ) সর্বোচ্চ সীমা মোট আয়ের ৪,৬৪,৮০০ টাকা ২৫%         ১,১৬,২০০/-
(গ)         ১,৫০,০০,০০০/-
অনুমোদনযোগ্য অংক (eligible amount) (ক) বা (খ) বা (গ) এই
তিনটির মধ্যে যেটি কম                      ৯৭,০৮০/-

কর রেয়াতের পরিমাণঃ
করদাতার মোট আয় ১০ লক্ষ টাকার অধিক না হওয়ায় কর রেয়াতের পরিমাণ হবে অনুমোদনযোগ্য অংক (eligible amount) ৯৭,০৮০ এর ১৫% অর্থাৎ (৯৭,০৮০ × ১৫%) = ১৪,৫৬২/-
ফলে প্রদেয় করের পরিমাণ হবে ২১,৪৮০-১৪,৫৮২ = ৬,৮৯৮/-

(২) নিরাপত্তা (সিকিউরিটির) উপর সুদ
(৩) গৃহ সম্পত্তি হতে  আয়
(৪) কৃষি আয়
(৫) ব্যবসা বা পেশা হতে আয়
(৬) ফার্মের আয়ের অংশ
(৭) অন্যান্য উৎস হতে আয়
(৮) মূলধনী আয়
(৯) স্বামী/স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *